October 30, 2024, 9:18 am
ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া, দ্য কুষ্টিয়া টাইমস/
বাংলাদেশ ; পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ জুড়ে অবস্থিত এ ভূখন্ডটি মুলত একটি নদীমাতৃক অঞ্চল ; উর্বব পাললিক ভু-ভাগ যার অনন্য বৈশিষ্ট যেখানে জনবসতি গড়ে উঠে প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে। বাংলাদেশ শব্দটিও খুঁজে পাওয় যায় ঐ সময়টির দ্রাবিয় সভ্যতার সূত্র ধরেই।
ইতিহাস বলছে বহু পূর্ব থেকে নিজ ভু-খন্ডেই সমৃদ্ধ ছিল বাংলা জনপদটি। এমনকি মুঘল আমলেও বিশ্বের মোট উৎপাদনের (জিডিপির) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হতো এই সুবাহ বাংলায় যা সে সময় সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল।
এই বাংলায় বিপর্যয় নেমে আসতে থাকে ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে। বৃটিশের ১৯০ বছর, পাকিস্তানের ২৫ বছর ছিল শুধু ধারাবাহিক শোষণ, শাসন আর লুটতরাজ। পরবর্তীতে সকল শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শেষে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে “বাংলাদেশ” নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহানায়ক ছিলেন এ ভু-খন্ডেরই হাজার বছরের সেই শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ; আমাদের জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। তাঁর হাতে ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক যুদ্ধ-বিধস্ত ও ক্ষয়ে যাওয়া অর্থনীতি, যার বর্তমান মুল্যমান ৩০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক রির্জাভ ছিল শুণ্য। শুরু করাটা তাই ছিল পাহড়সম চ্যালেঞ্জ। তিনি তা গ্রহন করেছিলেন। সামাজিক সমতা ও ন্যায়বিচার চিন্তাকে অগ্রভাগে ধারণ করে তিনি অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ এক “সোনার বাংলা”, যা ঐ বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়িয়েও মোটেই কোন ইউটোপিয়া ছিল না। কারন বাস্তববাদী ও দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে দেশ কয়েক শতাব্দী আগেও কৃষি উৎপাদন, সোনালি আঁশ পাট, মসলিন, রেশম, সুতি বস্ত্র এবং মসলা রপ্তানিতে সমৃদ্ধ এক সোনার দেশ ছিল সেই দেশ কখনও পিছিয়ে থাকতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু পরিকল্পিত উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে আধুনিক রাষ্ট্রের এক রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন এবং তা বাস্তবায়নে উন্নয়ন চর্চা ও চিন্তা-চেতনায় ব্যক্তিত্বের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন তা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) প্রতিফলিত হয়েছিল। সাড়ে তিন বছরের স্বল্প পরিসরে বঙ্গবন্ধু এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধির দিকে যাত্রার এক সোনালী সোপান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
কিš‘ নিজ হাতে করা মুক্ত ও স্বাধীন বাংলায় বঙ্গবন্ধুর এ স্বপ্নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হত্যা করে সেদিন ঘাতকরা শুধু একটি জাতির আশা-প্রত্যাশাকে ভেঙে স্তব্ধ করে দেয়নি, নস্যাৎ করে দেয় একটি উন্নয়ন স্বপ্নকেও।
সময়ের অমোঘ নিয়মে আজ সেই মুক্তির, সেই স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছে দেশ ; জাতির পিতারই রক্তের সুযোগ্য উত্তরাধিকার, তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত পরিকল্পনা, তাঁর দীর্ঘলালিত সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছিলেন (কোটেশন শুরু) “কোনো একটি পরিকল্পনা কেবল কারিগরি এবং অর্থনৈতিক দলিল নয়, রাজনৈতিক দলিলও বটে। এর মাধ্যমে জনগণকে অনুপ্রাণিত, সংঘবদ্ধ এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে, পরিকল্পনায় অবশ্যই জাতির জন্য একটি রূপকল্প ও তা বাস্তবে রূপায়নের প্রেক্ষিত থাকতে হবে” (কোটেশন সমাপ্ত)
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ব্যবহৃত * পরিকল্পনার কারিগরিকরণ, * রাজনৈতিক দলিল, * রুপকল্প ও * প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রভৃতি রুপকল্প-২০৪১’র গুরুত্বপূর্ণ অনষঙ্গ।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বা রাজনৈতিক সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল জাতির স্বাধীনতা, লক্ষ্য ছিল উন্নত দেশ গড়ার। তার নিজের ভাষায়, ‘আমার বাঙলা হবে স্বাধীন, আমার বাঙলা হবে রূপসী বাংলা, আমার বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, আমার বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।
শেখ হাসিনা ঃ এক নিঃশঙ্ক চিত্তের অভিযাত্রী ; বাঙালির সকল স্বপ্ন জয়ের সারথী/
বঙ্গবন্ধুর শুরুটা ছিল স্বপ্নের বীজ বপণ। শেখ হাসিনার শুরুটা সেই স্বপ্নের অগ্রযাত্রা ও এক উ”চতম সাফল্যের রুপকল্প : বাংলাদেশের ইতিহাসের নবপর্যায়ের সূচনা। যেখানে চিত্রের পুরোটা জুড়েই তৈরি হয়েছে প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির সুনির্মল মোহনা। মনে করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতার সময় এটি। হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর শেখ হাসিনাই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির সকল স্বপ্ন জয়ের সারথী।
যদি উপরোক্ত দাবির নিস্পত্তি করতে চাই তাহলে মোটাদাগে যে বিষয়গুলো সবথেকে প্রথমে আসবে সেগুলো হলো : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট স্থাপন উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে উন্নীত, রিজার্ভ মাত্র ৩.৫ বিলিয়ন থেকে রিজার্ভ ৪৮.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, নাগরিকদের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত, ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত ও প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফোর-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
এছাড়াও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। একইসঙ্গে দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে নিয়েছেন কার্যকরী পদক্ষেপ। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে কৃষি ও শিল্পসহ অর্থনৈতিক খাতগুলোতে সময়োপযোগী ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তা বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়। যার কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী অবস্থানে ছিল বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। সবার জন্য বিনামূল্যে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চার কোটিও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে তিনি বিশ্বের সব মানুষের জন্য টিকাপ্রাপ্তির সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করে। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ক্রাউন জুয়েল’ বা ‘মুকুট মণি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে।
রুপকল্প : ২০৪১/ বঙ্গবন্ধু থেকে হাসিনা/
একবিংশ শতাব্দীর অনিবার্য ও অবিসংবাদী বৈশিষ্ট্য হলো সর্বব্যাপী পরিবর্তন। দ্রæতগামীতা ও ক্ষিপ্র রূপান্তর এই পরিবর্তনের মুল ধর্ম। আমাদের বর্তমান শিল্প ও বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ সবকিছুকেই এই রূপান্তরকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। পরবর্তী অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতিকে এই পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে হবে। এতো দ্রæততার সাথে এই পরিবর্তন ঘটবে যে, সমাজ যদি রূপান্তরের এই অত্যাসন্ন প্লাবন মোকাবেলার প্রস্তুতি না নেয় তাহলে হয়তো আমরা আবার নতুন বিশ্বব্যবস্থায় আবদ্ধ জলাশয়ে নিক্ষিপ্ত হবো। তাই একমাত্র সঠিক পন্থা হলো সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা। এটিই মোটাদাগে ২০২১-২০৪১ রুপকল্প প্রেক্ষিত। এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনার অন্তর্নিহিত ও চ‚ড়ান্ত লক্ষ্যে দুটি প্রধান স্বপ্ন প্রাধান্য পেয়েছে:
১/ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে আজকের মূল্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২,৫০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি এবং যা হবে ডিজিটাল বিশ্বের সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ।
২/ বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা।
মোটাদাগে আরো যা অর্জিত হবে/
‘রূপকল্প ২০২১’ এর সাফল্যের ধারাবহিকতা ধরেই এসেছে ‘রূপকল্প ২০৪১’ যার উদ্দীপনাময় সূচনা’ হিসেবে ধারণ করা হয়েছে জাতির পিতার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, দুর্নীতি ও শোষণহীন সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ গড়ে তোলা’কে আর অর্ন্তনিহিত লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালের মধ্যেই চরম দারিদ্র্যের অবসান ও উ”চ-মধ্য আয়ের সোপানে উত্তরণ ; ২০৩১-২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উ”চ-আয়ের উন্নত দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়া। একই সময়ে এখনকার গ্রাম ও শহরের যে দৃশ্যমাণ পার্থক্য সেটিও অবসান ঘটানো। আগামী দু’দশকে ‘মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’-এর গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯.০২ শতাংশ হারে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশে সম্ভাব্য জনসংখ্যা হবে একুশ কোটি তিন লাখ। যাদের মাথাপিছু আয় হবে ন্যূনতম ১২৫০০ ডলার। চরম দরিদ্র লোক, যাদের দৈনিক আয় থাকবে ২.১৬ ডলারের কম এমন লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে ০.৬৮ শতাংশে। আর দরিদ্র লোক, যাদের দৈনিক আয় থাকবে ৩.২০ ডলার, এমন লোকের সংখ্যা হবে ২.৫৯ শতাংশ। আপাতভাবে মনে হতে পারে এটি প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করা।
এই রুপকল্পটি মুলত একটি দলিল যা অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত করা হয়েছে। এটি একটি দিকনির্দেশনা। মুল কাজটি সংঘটিত হবে কার্ম-তৎপরতার সকল কৌশলসমুহকে সন্নিবেশ ও সমন্বয় করে।
দুটি কারণে দলিলটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। প্রথমত: যদি বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের শর্ত পূরণ করে তবে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত: ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন।
বিশ্ব ব্যাংকের মানদন্ড বলছে অভীষ্ঠ অর্জন অসম্ভব নয়। তবে পরিকল্পনার কৌশলগত অভীষ্ট ও মাইলফলকগুলো হলো- রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং কাঠামোগত রূপান্তর, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কৃষি খাতে মৌলিক পরিবর্তন, ভবিষ্যতের সেবা খাত গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিকে প্রাথমিকভাবে শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য সেতুবন্ধন রচনা, একটি উ”চ আয়ের অর্থনীতির দিকে অগ্রযাত্রা কৌশলের অপরিহার্য অংশ হবে নগরের বিস্তার, যা ”আমার গ্রাম, আমার শহর” প্রত্যয় দ্বারা অনুপ্রাণিত, একটি অনুক‚ল পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান হবে দক্ষ জ্বালানি ও অবকাঠামো, যা দ্রুত, দক্ষ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে; জলবায়ু পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ; একটি দক্ষতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশকে জ্ঞানভান্ডার দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ/
শ্রদ্ধেয় ড. আকবর আলি খান কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে গত ৪৯ বছরে ‘দারিদ্র্যের অনেক চিহ্ন বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে গেছে’। হ্যাঁ তথ্যটি সঠিক। তবে এও সত্য যে গত দশকে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্তে¡ও আমাদের আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। কারন বিশ্ব এখন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যা”েছ। কিছু কিছু দেশ আমাদের চেয়ে ভালো করছে।
পুরো প্রেক্ষিত পরিকল্পনা চারটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তম্ভের ওপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : (১) সুশাসন; (২) গণতন্ত্রায়ণ; (৩) বিকেন্দ্রীকরণ এবং (৪) সক্ষমতা বৃদ্ধি। বস্তুত: এই চারটি ভিত্তির ওপর নির্ভর করবে উন্নত জাতি হিসেবে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।
দেশ ‘প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের’ অঙ্গীকারাবদ্ধ। সময়ের আলোচিত ডযু ঘধঃরড়হং ঋধরষ বইয়ে টেকসই উন্নয়নের জন্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। রূপকল্প ২০৪১-এ ঠিক তেমনই আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান উন্নত’ করাকে দেখা হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনভাবে, সততা ও দক্ষতা’র সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই দেশে অর্জিত হতে পারে সুশাসন, বৈষম্যহীন উন্নয়ন।
সবশেষে বলতে চাই, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ এর আওতায় যে অসামান্য অগ্রগতি হয়েছে, তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের সাক্ষ্যবাহী। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর আওতায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নলালিত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে উ”চআয় দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাবার জন্য দেশ আজ পুরোপুরি প্রস্তুত।
সামনে পাহাড়সম সমস্যা থাকলেও তা অলঙ্ঘনীয় নয়। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ প্রমাণ করেছে যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, শক্তিশালী পরিকল্পনা কৌশল ও নিবেদিত প্রচেষ্টা কীভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত, বলিষ্ঠ ও অবিচল নীতি-নেতৃত্বে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ বাস্তবায়নে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply